Login

Breadcrumbs

জগন্নাথ হল দুর্ঘটনার একত্রিশ বছর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত

১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর বিভীষিকাময় রাতে জগন্নাথ হলে সংঘটিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যে সকল ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথি নিহত হয়েছিলেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতি বছর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস’ পালন করা হয়। এ বছর মর্মন্তুদ সেই দুর্ঘটনার একত্রিশ বছরে ১৫ অক্টোবর ২০১৬, শনিবার ভাবগম্ভীর পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়। এ উপলক্ষে সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয় ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শোক মিছিল সহকারে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ জগন্নাথ হল ‘স্মৃতি অক্টোবর’ স্মারকস্তম্ভে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জগন্নাথ হল অ্যালমানাই অ্যাসোসিয়েশসহ বিভিন্ন হল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও সদস্যবর্গ স্ব-স্ব ব্যানারসহ উক্ত শোক মিছিলে অংশগ্রহণ এবং স্মারকস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জগন্নাথ হল অক্টোবর স্মৃতিভবনস্থ টিভি কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

DU-Jagannath-Day-01

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসার ও সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি পান্না লাল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, হলের প্রাক্তন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জগদীশ চন্দ্র শুক্লদাস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার এবং আলোচনা সভা সঞ্চালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান।

1

উপাচার্য প্রথমেই দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র ও অতিথিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।  তিনি বলেন, ১৫ অক্টোবর শোক দিবস আমাদের দায়িত্বশীলতা, কর্তব্যপরায়ণতা, উদারতা এবং মানবিকতার তাগিদ দিয়ে যায় । এই দিবসের তাৎপর্য আমাদের কাছে অত্যন্ত কার্যকর, ১৫ অক্টোবর এই শোক দিবস শিক্ষা দেয় দুর্যোগ সতর্কতার জন্য, তাই এই দিবসকে বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণ দিবস হিসেবে আমরা অভিহিত করে থাকি।

2

অধ্যাপক সিদ্দিক বলেন, জগন্নাথ হলের তৎকালীন পরিষদ ভবনের ছাদ ধ্বসে পড়ার মূল কারণ ছিল জরাজীর্ণতা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ সার্বিকভাবে দায়ী থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনও না কোনও ব্যক্তি দায়ী ছিলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অনেক প্রাচীন ভবন রয়েছে, সে ভবনগুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঝুঁকি নিরসনে কিছু সংস্কার কাজ চলছে এবং কিছু হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের যার যার অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে সকল দুর্যোগ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। দায়িত্বহীনতার কারণে অনেক দুঃখজনক ঘটনার সৃষ্টি হয়, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জগন্নাথ হল দুর্ঘটনা। উপাচার্য চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের একটি উক্তি উদ্বৃত করে বলেন, ‘যে কাজটি কর, তোমার হৃদয় দিয়ে কর।’

5555

শোকসভায় জগন্নাথ হল অ্যালমানাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পান্না লাল দত্ত বলেন, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জগন্নাথ হলের যেসব ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে, বেঁচে থাকলে আজ তারা একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হতে পারতো। দুর্ঘটনাজনিত কারণে অকালপ্রয়াত অনুজদের আত্মার শান্তি কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি তিনি বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি জগন্নাথ হলসহ ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ভবন প্রয়োজন অনুসারে মেরামত করে ঝুঁকিমু্ক্ত রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরামর্শদান করেন এবং বলেন, আর যেন কেউ এ ধরণের দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারান। পান্না লাল দত্ত বলেন, জগন্নাথ হলের ছাত্রদের কল্যাণকর যে কোনও কিছু করা জগন্নাথ হল অ্যালমানাই অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই সম্প্রতি হলের নবনির্মিত সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৪ হাজার বর্গফুট একটি কক্ষে শহীদ মৃনাল বোস পাঠাগারের আসবাবপত্র আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আগামী জানুয়ারী মাসের মধ্যে জগন্নাথ হলের ছাত্রদের জন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক গঠিত ৫০ টাকার বৃত্তি তহবিল হতে তাদেরকে বৃত্তি দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। ক্রমান্বয়ে এই বৃত্তি তহবিল কোটি টাকার উর্দ্ধে উন্নীত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন ।

শোক দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ হল উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসমূহে মোনাজাত করে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয় । সকালে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি পালন এবং দিনভর নিহতদের তৈলচিত্র ও তৎসম্পর্কিত দ্রব্যাদি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় জগন্নাথ হল উপাসনালয়ে ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান (শোক সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তি) আয়োজন করা হয়।